Monday, March 4, 2013

Jaundice-জন্ডিস


নানা রোগের লক্ষণ জন্ডিস।

জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণমাত্ররক্তে বিলিরুবিন নামক এক ধরনের প্লিগমেন্টের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়  রোগে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়জন্ডিসের মাত্রা বেশি হলে হাত-পা, এমনকি শরীরেও হলদেটে ভাব চলে আসতে পারেএর পাশাপাশি প্রস্রাবের রং হালকা থেকে গাঢ় হলদেটে হয়ে যায়জন্ডিসে বেশির ভাগ  ক্ষেত্রে লিভারের মতো গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গটি আক্রান্ত হয়আর ক্ষেত্রবিশেষে এটি জীবন নাশকারী অবস্থায় চলে যেতে পারেতাই এ রোগটি হেলাফেলা করা উচিত নয় মোটেই

জন্ডিস যেভাবে হয়
আগেই যেমনটি বলেছি, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয় রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময় স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে, যা পরে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে পিত্তনালির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করেঅন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যেকোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস

জন্ডিস ও লিভার
লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণআমরা যা কিছুই খাই না কেন, তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়লিভার নানা কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারেআমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোহেপাটাইটিস , বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিসতবে উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মদ্যপান জন্ডিসের অন্যতম কারণ|
এ ছাড়া অটোইমিউন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ আরো কিছু বিরল ধরনের লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারেওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও অনেক সময় জন্ডিস হয়তা ছাড়া থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিন ই-ডিজিজের মতো যেসব রোগে রক্ত ভেঙে যায় কিংবা পিত্তনালির পাথর বা টিউমার এবং লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও জন্ডিস হতে পারেতাই জন্ডিস শুধুই লিভারের রোগ এমনটি ভাবা ঠিক নয়
লক্ষণ
জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুধামান্দ্য, অরুচি, বমিভাব, জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, মৃদু বা তীব্র পেটব্যথা ইত্যাদি হতে পারেএসব উপসর্গ দেখা দিলে তাই অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরমর্শ নেওয়া উচিতচিকিসক শারীরিক লক্ষণ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিসার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন
চিকিসা
ভাইরাল হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া চিকিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করারও প্রয়োজন হতে পারে ভাইরাল হেপাটাইটিস সাধারণত তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায় এ সময় ব্যথার ওষুধযেমন-প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ঘুমের ওষুধসহ কোনো অপ্রয়োজনীয় ও কবিরাজি ওষুধ খাওয়া উচিত নয়অন্যভাবে বলতে গেলে, জন্ডিস হলে বিশেষজ্ঞ চিকিসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই বাস্তবে সেবন করা ঠিক নয়এতে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটাই বেশি থাকে
হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্ডিস সেরে যাওয়ার পরও লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে, যা লিভার পরবর্তী সময়ে লিভারসিরোসিস আর এমনকি লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও তৈরি করতে পারে তাই এ দুটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দীর্ঘমেয়াদি লিভার বিশেষজ্ঞের ফলোআপে থাকত হবে এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিভাইরাল চিকিসা নিতে হবে

হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে
বাঁচার উপায়
হেপাটাইটিস এ ও ই খাদ্য-পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়আর বি সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও প্রচুর পানি খেতে হবেশরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিনডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি
হেপাটাইটিস বি ও এ-এর টিকা দেশে পাওয়া যায়বিশেষ করে  হেপাটাইটিস বির টিকা প্রত্যেকেরই নেওয়া উচিতযারা সেলুনে শেভ করেন খেয়াল রাখবেন যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর আবারও ব্যবহার করা না হয়
জন্ডিস অনেক ক্ষেত্রেই এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারেতাই বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে জানতে হবে, হতে হবে সচেতন
পোষ্টটি ভাল লাগলে লাইক ও শেয়ার দিবেন

No comments:

Post a Comment